শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৫২ পূর্বাহ্ন
মাসুদ রানা :পিরোজপুরের স্বরূপকাঠিতে সন্ধ্যা নদীর অব্যাহত ভাঙনে পাল্টে যাচ্ছে ওই এলাকার মানচিত্র। নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে দক্ষিণ কৌরিখাড়া, গনমান ও পূর্ব সোহাগদল গ্রামের বসতঘর, বাগানবাড়ি, ফসলি জমিসহ বিস্তীর্ণ জনপদ। আশির দশকের শেষ দিকে নদীভাঙন শুরু হয়ে এখনো অব্যাহত রয়েছে তা। অব্যাহত এ নদীভাঙনের ফলে উপজেলার গনমান, ছারছীনা, দক্ষিণ কৌরিখাড়া, উত্তর কৌরিখাড়া, শান্তিহার, কুনিয়ারী, ব্যাসকাঠি, জলাবাড়ী, পূর্ব সোহাগদল সেহ্গাংল এলাকার হাজার হাজার একর ফসলি জমিসহ বিস্তীর্ণ জনপদের অনেক বসতভিটে সর্বনাশা সন্ধ্যার গর্ভে হারিয়ে গেছে।
২০১০-১১ অর্থবছরে তৎকালীন সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ মো. শাহ আলমের প্রচেষ্টায় দক্ষিণ ও উত্তর কৌড়িখাড়া গ্রাম ও ছারছীনা এলাকায় ভাঙন রোধে বøক ও জিও টেক্স ব্যাগে বালু ভর্তি করে ফেলা হয়। কিন্তু সেটি প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল হওয়ায় ওই এলাকায় ভাঙন থামলেও সন্ধ্যা নদীর দক্ষিণ দিকে ভাঙনের তীব্রতা ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। গত দুই বছরে দক্ষিণ কৌরিখাড়া ও গনমান গ্রামে অন্তত ৫০টি বসতভিটে, কৌরিখাড়া লঞ্চঘাট এলাকার ১৫টি দোকানসহ প্রায় ৪০ একর জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। দফায় দফায় ভাঙনের ফলে দক্ষিণ কৌরিখাড়া ও গনমান এলাকার সন্ধ্যাপারের মানুষ আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।
সন্ধ্যা নদীর তীরে বসবাসকারী গনমান গ্রামের আবুল হোসেন বলেন, `নদীভাঙনের কারণে বসতঘর স্থানান্তর করেও শেষ রক্ষা হচ্ছে না। জায়গা জমি না থাকায় শেষ আশ্রয়স্থল বসতভিটায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে বসবাস করছি। কৌরিখাড়া ও গনমান এলাকার নদীপাড়ে বসবাসকারী কয়েকজন জানান, সন্ধ্যা নদীর অব্যাহত ভাঙনে তারা আতঙ্কগ্রস্ত, প্রায়ই নির্ঘুম রাত কাটছে তাদের। সন্ধ্যার করাল গ্রাসে দিন দিন সংকুচিত হয়ে আসছে দক্ষিণ কৌরিখাড়া ও গনমান গ্রাম।
ইতিমধ্যে নদীভাঙনে গ্রাম দুটির প্রায় দুই তৃতীয়াংশ হারিয়ে গেছে। এভাবে ভাঙন অব্যাহত থাকলে স্বরূপকাঠির মানচিত্র থেকে অচিরেই হারিয়ে যাবে এ দুটি গ্রাম। ভাঙনকবলিত এলাকার অনেক পরিবার এখনো শেষ আশ্রয়স্থল বসতভিটায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে। ভাঙনে সর্বস্ব হারিয়ে ছিন্নমূলে পরিণত হয়েছে ওইসব এলাকার অনেক পরিবার। মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। কেউ রাস্তার ওপর, কেউবা অন্যের বাগানে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন। স্বরূপকাঠির পিরোজপুর সড়কের কামারকাঠি নামক স্থানে নদীভাঙনের ফলে চরম ঝুঁকির মধ্যে যানবাহন চলাচল করছে। এদিকে, সন্ধ্যানদীর ভাঙনের হুমকির সম্মুখীন কৌরিখাড়া বিসিক শিল্পনগরী, ইন্দুরহাট মিয়ারহাট বন্দর, কৌরিখাড়া ডাকঘরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণসহ তাদের পুনর্বাসনে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।
Leave a Reply